
কানিজ ফাতেমা জেমিন
খুলনা মেডিকেল কলেজ
সাদা অ্যাপ্রন পরে, গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে আয়নায় নিজেকে কল্পনা না করলেও ডাক্তার হওয়ার সুপ্ত বীজ হয়তো খুব ছোট থেকেই ধারণ করেছি। যত দূর মনে পড়ে, গাছগাছালির প্রতি তীব্র আকর্ষণ থেকে মাঝেমধ্যেই এ-লতা ও-লতা ছেঁচে তার রস দিয়ে চলত আমার নানা পরীক্ষা। এ রকম করতে করতেই আমার মায়ের ভিটামিন সাপ্লিমেন্টের সঙ্গে আমার বানানো টোটকা মিশিয়ে কালো কুচকুচে এক তরল বানালাম। খাইয়ে দিলাম আমাদের গৃহপরিচারিকার ১০ বছরের মেয়েকে। আমিও তার বয়সীই ছিলাম। অবাক ব্যাপার, রোগা–পটকা মেয়েটা ভিটামিনের বদৌলতে কদিনেই তরতাজা হয়ে উঠল। যদিও এ কাজের জন্য দাদির হাতে বেশ মার খেয়েছিলাম। তবে সিন্দাবাদের ভূতের মতো আমার মাথায়ও চেপে বসল মানবশরীর নিয়ে জানার অপ্রতিরোধ্য আগ্রহ।
যখন কেউ জিজ্ঞাসা করে, প্রকৌশল ছেড়ে মেডিকেলে কেন পড়লে, মনে মনে বলি, মৃত্যুদূতের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করা রিয়েল লাইফ সুপার হিরো হতে কে না চাইবে বলুন তো?
তবে এ পথ যে বড় দুর্গম। অত্যধিক পড়ার চাপে মাঝেমধ্যে সবকিছু বিস্বাদ লাগে। ঘিরে ধরে পরিবার ছেড়ে এত দূরে থাকার নিঃসঙ্গতা। হাসপাতালে হাজার হাজার মানুষের দুর্দশা, আহাজারির সাক্ষীও হতে হয় রোজ রোজ।
দিন শেষে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখন ফিরে তাকাই। দেখি, পরিজন নিয়ে হাসপাতালের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়ায় কিছু মানুষ। একটাই আশা, হয়তো ডাক্তার এলেই ভালো হয়ে যাবে প্রিয় মানুষগুলো।
যখন কেউ জিজ্ঞাসা করে, প্রকৌশল ছেড়ে মেডিকেলে কেন পড়লে, মনে মনে বলি, মৃত্যুদূতের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করা রিয়েল লাইফ সুপার হিরো হতে কে না চাইবে বলুন তো?
আরও পড়ুন
ভবিষ্যত চিকিৎসকদের প্রতি পরামর্শ
০৫ জানুয়ারি ২০২৫
ভবিষ্যত চিকিৎসকদের প্রতি পরামর্শ
কিশোরগঞ্জের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আদিব রহমান
কিশোরগঞ্জের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আদিব রহমানছবি: সংগৃহীত
অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত যেন মানুষের সেবা করে যেতে পারি
আদিব রহমান
জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ
সিলেকশন তালিকা দেওয়ার পর থেকেই মনে ভয়, মা-বাবাকে ছাড়া বাইরে কোথাও থাকা হয়নি। তা ছাড়া শিক্ষক, সিনিয়র, রুমমেট কেমন হবে—সে চিন্তাও ছিল। তবে সবাই অনেক সাহায্য করেছে। এমন কিছু শিক্ষককে পেয়েছি, যাঁরা মায়ের মতো আগলে রাখেন, বাবার মতো সাহস জোগান। এভাবেই চলে আসে মেডিকেল কলেজের প্রথম ক্লাস। প্রথমেই ছিল অ্যানাটমি। Supination, pronation, invagination, ivagination—এমন কতগুলো শব্দের সঙ্গে পরিচিত হলাম। আর পেশির নামের বাহারও বেশ—Flexor digitorum profundus, Extensor carpi radialis longus। প্রতিদিনের আইটেমের (মৌখিক পরীক্ষা) প্রেশারে নিজেকে কেমন যেন হারিয়ে ফেলছিলাম। মাঝেমধ্যে মনে হয়, কেন মেডিকেলে এলাম।
তবে যত দিন যাচ্ছে, তত জানতে পারছি শরীরের কত কত রহস্য। হৃদ্যন্ত্রের ভালভগুলোর কথাই চিন্তা করুন। প্রতিনিয়ত সংকোচন আর প্রসারণের সময় এদের কারণেই রক্ত উল্টো দিকে প্রবাহিত হয় না। তা ছাড়া হৃদ্যন্ত্র বিভিন্ন প্রকোষ্ঠে পৃথক থাকার কারণে অক্সিজেনসমৃদ্ধ আর অক্সিজেনবিহীন রক্ত একসঙ্গে মেশে না। ভাবুন, বাঁ ভেন্ট্রিকল কেন ডান ভেন্ট্রিকলের চেয়ে তিন গুণ পুরু।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘আর যে ব্যক্তি কারও প্রাণ রক্ষা করল, সে যেন সব মানবজাতির প্রাণরক্ষা করল’। জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত যেন মানুষের সেবা করে যেতে পারি।
খুলনা মেডিকেল কলেজ
সাদা অ্যাপ্রন পরে, গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে আয়নায় নিজেকে কল্পনা না করলেও ডাক্তার হওয়ার সুপ্ত বীজ হয়তো খুব ছোট থেকেই ধারণ করেছি। যত দূর মনে পড়ে, গাছগাছালির প্রতি তীব্র আকর্ষণ থেকে মাঝেমধ্যেই এ-লতা ও-লতা ছেঁচে তার রস দিয়ে চলত আমার নানা পরীক্ষা। এ রকম করতে করতেই আমার মায়ের ভিটামিন সাপ্লিমেন্টের সঙ্গে আমার বানানো টোটকা মিশিয়ে কালো কুচকুচে এক তরল বানালাম। খাইয়ে দিলাম আমাদের গৃহপরিচারিকার ১০ বছরের মেয়েকে। আমিও তার বয়সীই ছিলাম। অবাক ব্যাপার, রোগা–পটকা মেয়েটা ভিটামিনের বদৌলতে কদিনেই তরতাজা হয়ে উঠল। যদিও এ কাজের জন্য দাদির হাতে বেশ মার খেয়েছিলাম। তবে সিন্দাবাদের ভূতের মতো আমার মাথায়ও চেপে বসল মানবশরীর নিয়ে জানার অপ্রতিরোধ্য আগ্রহ।
যখন কেউ জিজ্ঞাসা করে, প্রকৌশল ছেড়ে মেডিকেলে কেন পড়লে, মনে মনে বলি, মৃত্যুদূতের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করা রিয়েল লাইফ সুপার হিরো হতে কে না চাইবে বলুন তো?
তবে এ পথ যে বড় দুর্গম। অত্যধিক পড়ার চাপে মাঝেমধ্যে সবকিছু বিস্বাদ লাগে। ঘিরে ধরে পরিবার ছেড়ে এত দূরে থাকার নিঃসঙ্গতা। হাসপাতালে হাজার হাজার মানুষের দুর্দশা, আহাজারির সাক্ষীও হতে হয় রোজ রোজ।
দিন শেষে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখন ফিরে তাকাই। দেখি, পরিজন নিয়ে হাসপাতালের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়ায় কিছু মানুষ। একটাই আশা, হয়তো ডাক্তার এলেই ভালো হয়ে যাবে প্রিয় মানুষগুলো।
যখন কেউ জিজ্ঞাসা করে, প্রকৌশল ছেড়ে মেডিকেলে কেন পড়লে, মনে মনে বলি, মৃত্যুদূতের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করা রিয়েল লাইফ সুপার হিরো হতে কে না চাইবে বলুন তো?
আরও পড়ুন
ভবিষ্যত চিকিৎসকদের প্রতি পরামর্শ
০৫ জানুয়ারি ২০২৫
ভবিষ্যত চিকিৎসকদের প্রতি পরামর্শ
কিশোরগঞ্জের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আদিব রহমান
কিশোরগঞ্জের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আদিব রহমানছবি: সংগৃহীত
অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত যেন মানুষের সেবা করে যেতে পারি
আদিব রহমান
জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ
সিলেকশন তালিকা দেওয়ার পর থেকেই মনে ভয়, মা-বাবাকে ছাড়া বাইরে কোথাও থাকা হয়নি। তা ছাড়া শিক্ষক, সিনিয়র, রুমমেট কেমন হবে—সে চিন্তাও ছিল। তবে সবাই অনেক সাহায্য করেছে। এমন কিছু শিক্ষককে পেয়েছি, যাঁরা মায়ের মতো আগলে রাখেন, বাবার মতো সাহস জোগান। এভাবেই চলে আসে মেডিকেল কলেজের প্রথম ক্লাস। প্রথমেই ছিল অ্যানাটমি। Supination, pronation, invagination, ivagination—এমন কতগুলো শব্দের সঙ্গে পরিচিত হলাম। আর পেশির নামের বাহারও বেশ—Flexor digitorum profundus, Extensor carpi radialis longus। প্রতিদিনের আইটেমের (মৌখিক পরীক্ষা) প্রেশারে নিজেকে কেমন যেন হারিয়ে ফেলছিলাম। মাঝেমধ্যে মনে হয়, কেন মেডিকেলে এলাম।
তবে যত দিন যাচ্ছে, তত জানতে পারছি শরীরের কত কত রহস্য। হৃদ্যন্ত্রের ভালভগুলোর কথাই চিন্তা করুন। প্রতিনিয়ত সংকোচন আর প্রসারণের সময় এদের কারণেই রক্ত উল্টো দিকে প্রবাহিত হয় না। তা ছাড়া হৃদ্যন্ত্র বিভিন্ন প্রকোষ্ঠে পৃথক থাকার কারণে অক্সিজেনসমৃদ্ধ আর অক্সিজেনবিহীন রক্ত একসঙ্গে মেশে না। ভাবুন, বাঁ ভেন্ট্রিকল কেন ডান ভেন্ট্রিকলের চেয়ে তিন গুণ পুরু।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘আর যে ব্যক্তি কারও প্রাণ রক্ষা করল, সে যেন সব মানবজাতির প্রাণরক্ষা করল’। জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত যেন মানুষের সেবা করে যেতে পারি।